পাঠাও রাইডার আল মামুন সোহাগ এর বীরত্বে বেঁচে গেল আরেক নারী
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 9, 2018
পাঠাও রাইডার আল মামুন সোহাগ এর বীরত্বে বেঁচে গেল আরেক নারী
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ আল মামুন সোহাগ
ঢাকায় একজন পাঠাও রাইডারের বীরত্বে একজন নারী বাসে ধর্ষণের হাত থেকে বেঁচে যান। তাঁর নাম আল মামুন সোহাগ। তিনি পাঠাও-এর একজন ফ্রি-ল্যান্স রাইডার এবং অবসর সময়ে তার বাইকে রাইড দিয়ে থাকেন।
*নাম: আল মামুন সোহাগ
*বাড়িঃ ঢাকা
আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
আমার জন্ম ঢাকায় হলেও আমার বেড়ে ওঠা খুলনা জেলার নড়াইলে। স্কুলজীবন পেরিয়ে কলেজে ওঠা পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম। বর্তমানে আমি একটি প্রকাশনীর এডিটর হিসেবে আছি। অবশ্য আমি নিজেও গল্প এবং কবিতা লিখি।
৪ই নভেম্বর এর ঘটনা টি আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
গত ৪ই নভেম্বর, রাতে অফিস শেষে, আমি মিরপুর থেকে একটি রাইড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করি। ইউজার এর নাম ছিল মফিজুল এবং তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র ছিলেন। টেকনিক্যালের মোড়ে, রাত ১০:৩০টার দিকে, আমরা উভয়েই একটি জোরালো চিৎকার শুনতে পাই। ধীর গতিতে চলতে থাকা একটি বাসের ভেতর থেকে একজন মহিলা তারস্বরে চিৎকার করছিলেন, “আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান, এরা আমাকে মেরে ফেলবে!” বলে। আমরা বাসটির পাশে গেলাম, গিয়ে চালককে জিজ্ঞেস করলাম কি হচ্ছে। সে দাবি করলো, এটা নিছক এক জামাই-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া। এটা বলেই সে বাসের গতি বাড়িয়ে চলে গেল। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ সন্দেহজনক মনে হল। সেজন্য আমি মফিজুল ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আমরা জিনিসটা খুঁটিয়ে দেখবো কি না। তাতে উনি সম্মতি দেয়াতে এগিয়ে বাস টিকে ধাওয়া দিলাম। প্রায়ই দেশ বিদেশে এরকম বাসের ভেতর নারীদের কিছু ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে খবর পাই। আমরা কখনোই এটা মেনে নিতে পারতাম না যে এমন একটা কিছু আমাদের আশেপাশে হচ্ছে জেনেও আমরা কিছুই করিনি।
সেই চিৎকারটি কেবল আমরা দুজনই শুনিনি। ওখানে বেশকিছু লেগুনা ছিল, সেখানকার মানুষেরাও সেসব শব্দ শুনেছিল। লেগুনার যাত্রীরা চালককে ঐ বাসটি অনুসরণ করার জন্য তাগাদা দিলেন।
আমি বাইক চালিয়ে বাসটি ধরার চেষ্টা করলাম। অবশেষে একটি সিগন্যালে এসে বাসটিকে ধরে ফেললাম (যেখানে তার থামা লাগতোই)। আমি এবং মফিজুল ভাই নেমে পড়লাম এবং বাসটির কাছে শোরগোল শুরু করে দিলাম। উপরিউক্ত লেগুনার যাত্রীরা আমাদের সাথে যোগদান করলেন। এর ফলে নিকটস্থ পুলিশ অফিসারদের নজর পড়ল। আমরা বাসটির দরজায় আঘাত করলাম, দাবি করতে লাগলাম মহিলাটি যেন নিজেই সামনে আসে। উনি জানালার পাসে আসার পর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম বাসের ভেতরে তার সাথে তার স্বামী ছিলেন কি না।
উনি বললেন, “এখানে আমার কোন স্বামী নেই। দয়া করে দরজাটি খোলানোর ব্যবস্থা করুন এবং আমাকে এখান থেকে বের করুন!”
পুলিশ অফিসারটি ড্রাইভারের সাথে কথা বললেন। তিনি বললেন, “আমাদের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে বাধ্য করো না।”
বাসের দরজা খুলতেই মহিলাটি দৌড়ে বেরিয়ে আসলেন। ওনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, এবং উনি প্রচণ্ড ভয়েও ছিলেন। পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে এনে ঐ পুলিশ অফিসার তাদেরকে নিকটস্থ থানায় নিয়ে গেলেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। উনি এরপর আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে বললেন, এবং আরও বললেন যে বাকিটা তারাই দেখবেন।
মহিলাটি তখন সহি সালামতে ছিলেন, এবং অপরাধীদের শাস্তির বিধান কর্তৃপক্ষই করবে। তা জেনে অনেক স্বস্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলাম।
আমরা হস্তক্ষেপ না করলে সৃষ্টি-কর্তাই জানেন কি না কি হয়ে যেতে পারতো।
একজন পাঠাও রাইডার হিসেবে আপনি একজন তরুণীর সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন। কেমন লাগছে আপনার?
পাঠাও আমার জন্য একটি আশীর্বাদ। পাঠাও-এর মাধ্যমে আমি চমৎকার কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমার কথা বলতে বলে মানুষের সাথে পরিচিত হতে বেশ ভাল লাগে। একজন রাইডার হওয়ায় এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করতে বেশ সাহায্য করে। ৪ই নভেম্বরের সেই কাহিনী আমাকে ব্যাপকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে, কিন্তু এই ঘটনার জন্য আমি বেশ কৃতজ্ঞও বটে। আমি যদি তখন যাত্রী না নিয়ে একা চালাতে থাকতাম, তাহলে হয়তো আমার মধ্যে চলন্ত একটি বাস থামানোর সাহসটা আসতো না।