আরেকজন সফল পাঠাও রাইডার মোস্তাফিজুর রহমান এর কথা
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 12, 2018
আরেকজন সফল পাঠাও রাইডার মোস্তাফিজুর রহমান এর কথা
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ মোস্তাফিজুর রহমান
ভালো লাগা আসলে রঙধনুর মতো। এর অনেক রঙ আছে। মাঝেমধ্যে একটি রঙের সঙ্গে আরেকটি রঙের সম্মীলন হয়, আবার মাঝেমধ্যে বিবাদ লেগে যায়। আমাদের সমাজের কিছু রীতিনীতি মধ্যে এমনি খেলা হয়।
*নাম: মোস্তাফিজুর রহমান
*বাড়িঃ ঢাকা
আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুনঃ
ছোটবেলায় পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী না থাকার কারণে বেশিদূর পড়ালেখা না করলেও যতটুকু পড়ার দরকার পড়েছি। শুধু পেটের দায় মিটানোর কোন চিন্তা কখনোই ছিল না আমার মধ্যে। তাই ক্যারিয়ার নিয়ে গম্ভীরভাবে ভেবে দেখেনি। তবে আমি শিল্পপ্রেমিক এবং গুণের সমাদরকারী হিসেবে পরিচিত বন্ধুদের কাছে।
পাঠাও-তে রাইড শেয়ার করার উদ্দেশ্য কি?
আসলে তেমন কোন বড় উদ্দেশ্য নেই। তবে পাঠাও এ রাইড শেয়ার করে আমি কিছু মানুষের জীবনে একটু উন্নয়ন আনতে চেষ্টা করেছি। যেমন আমার গাড়ি দেখে অনেক যাত্রী প্রশ্ন করে, ভাই এই ভালো গাড়ি নিয়ে আপনি পাঠাও চালান? আপনার চালানোর কি দরকার? আমি প্রশ্নের উত্তর খুব সহজভাবে দেই। বলি, আমার রোজগার করার কোন মাথাব্যথা নেই, তবে আমি আনন্দ পাই গাড়ি চালিয়ে এবং মানুষের সেবা দিয়ে। গাড়ি, বাড়ি থাকলে বা ঢের টাকা পয়সা থাকলে সেবা করা যায় না, মানুষকে রাইড দেওয়া যায় না এ হলো সমাজের পুরানো কুসংস্কার। আমার কোন অভাব নেই। বাড়ি আছে, গাড়িও আছে। যা অর্থ-সম্পদ আছে তা দিয়ে আমার নাতি-নাতনিদের ভালো কেটে যাবে, তবুও আমি পাঠাও-তে গাড়ির মাধ্যমে মানুষকে রাইড দেই। কারণ একটাই, আমার ভালো লাগে। আমি একটু ব্যতিক্রমী হওয়ার চেষ্টা করেছি। গাড়িতে কয়েকটি শিক্ষামূলক বই রাখলাম। যারা বাচ্চা নিয়ে উঠে তাদের বাচ্চাদের কিছু শিশুতোষ বই দেই পড়তে। আমি বই দেবার সময় খুব বিনয়ীভাবে বলি, পড়তে পারেন! অনেকেই পড়ে, আবার অনেকেই এক-দুই পৃষ্ঠা দেখে রেখে দেয়। তবে বাচ্চারা আনন্দ নিয়ে বই পড়ে। এখানে আমার কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই। তবে আমি মানুষকে বই পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পছন্দ করি।
এমন একটি রাইডের কথা বলুন যা আপনি সবসময় স্মরণে রাখবেন-
সেদিন কোন রাইড পাচ্ছিলাম না। আমি গাড়ি এক জায়গায় পার্ক করে বই পড়ছিলাম। আর মাঝেমাঝে অ্যাপে লক্ষ্য রাখছিলাম কোন রিকোয়েস্ট আসছে কিনা। প্রায় এক ঘণ্টা বসে থাকার পর একটি এলো। আমি বই বন্ধ করে পাশের সিটে রেখে অ্যাপ দিয়ে কল করলাম। লোকটি হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলেন আমি আশেপাশে আছি কি না। কথাবার্তা সেরে আমি এক হাসপাতালের গেটে গেলাম। লোকটি আমাকে দেখতেই চিনে ফেললেন। আমাকে দাঁড়াতে বলে কিছুক্ষণ পর তাঁর মাকে নিয়ে আসলেন। উনার অবস্থা শোচনীয় ছিল। এই হাসপাতালে চিকিৎসা সম্ভব নয়, তাই সামনের আরেক হাসপাতালে এখনই যেতে হবে। আমি তাকে সাহায্য করলাম তার মাকে ঠিকঠাক মতো করে গাড়িতে উঠাতে। সারা রাস্তায় লোকটির চেহারা ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। আমি মনে মনে দুয়া পড়তে লাগলাম। হাসপাতালে চলে এলে আমরা দুজনে মিলে তাঁকে পৌঁছে দেই নির্ধারিত জায়গায়। লোকটি এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলেন তাই আমার কথা একবারেই ভুলে গেলেন। আমি পাশে দাঁড়িয়ে তার মাকে দেখাশোনা করতে লাগলাম। আমি অপরিচিত বা অপরিচিত কিছু বাছবিচার করি না। একজনের বিপদ হয়েছে আর আমি যদি পাশে থাকি তাহলে অবশ্যই এগিয়ে যাই। লোকটি অনেকক্ষণ পর আমাকে লক্ষ্য করলো। সে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ভাই! আপনি আমার আজকে অনেক বড় উপকার করেছেন। আমার তখন মনে হল কারোর উপকার করার মতো ভালো কাজ, শান্তির কাজ আর একটাও হয়তো হয় না।
আপনার কি বিশেষ কিছু বলার আছে?
ভালো লাগা আসলে রঙধনুর মতো। এর অনেক রঙ আছে। মাঝেমধ্যে একটি রঙের সঙ্গে আরেকটি রঙের সম্মীলন হয়, আবার মাঝেমধ্যে বিবাদ লেগে যায়। আমাদের সমাজের কিছু রীতিনীতি মধ্যে এমনি খেলা হয়। ভালো জামাকাপড় পরা মানুষ গাড়িতে চড়বে, আর মলিন জামাকাপড় পরা মানুষ গাড়ি চলাবে। আমাকে এক শিক্ষিত লোক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি কি কারণে চালাচ্ছেন? আমার জবাব তৈরিই থাকে।