মুজিবুল হক তার জীবনে পরিবর্তন এনেছে পাঠাও রাইডার হয়ে
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 9, 2018
মুজিবুল হক তার জীবনে পরিবর্তন এনেছে পাঠাও রাইডার হয়ে
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ মুজিবুল হক
বয়স কখনই কাজের জন্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমরা সবসময় বলে থাকি, বয়স হয়ে গেছে এখন ছেড়ে দেই। আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। বাইক চালিয়ে আয় করছি, তারসঙ্গে কাজও করে যাচ্ছি।
*নাম: মুজিবুল হক
*বাড়িঃ বিক্রমপুর
আপনার ছোটবেলা সম্পর্কে কিছু বলুনঃ
আমার ছোটবেলা কেটেছে খুব অদ্ভুতভাবে। আমার যখন তের বছর বয়স তখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তাই অনেকদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে খাবার থেকে শুরু করে সব ধরণের কাজে সাহায্য করেছিলাম। যুদ্ধ শেষে আমি কৃষিকাজ শুরু করেছিলাম। তবে একদিন আমার মামা চিন্তা করে বের করলেন আমরা যদি ঢাকায় না আসি তাহলে আমাদের ছয় ভাইবোনের পড়াশুনা হবে না। তাই মামার সহযোগিতায় আমরা হুট করেই ঢাকায় চলে আসি।
পাঠাও কিভাবে আপনার জীবনে পরিবর্তন এনেছে?
সংসার চালানোর জন্য আমাদের তিন ভাইদের বিদেশে গিয়ে আয় করতে হয়েছিল। আমি নিজেই ১৭ বছর সৌদি আরবে ছিলাম। সেখানে লিমো ট্যাক্সি চালাতাম। অনেক কষ্ট হতো। পরিবারকে এক নজর দেখার জন্য আমার মন আঁকুপাঁকু করতো। অনেকদিন পর আমি যখন দেশে আসলাম তখন মা আমাকে যেতে দিলেন না। তবে থেকে যে গেলাম কিন্তু দেশে করবো কি? এই, ওই চাকরী করে ভালো লাগছিল না। সৌদি আরবে যা করে এসেছি ঠিক তেমন কিছু একটা করতে চাচ্ছিলাম। তবে বাংলাদেশে সে সুযোগ পাচ্ছিলাম না। একদিন আমার এক বন্ধু ফেসবুকের মাধ্যমে পাঠাও – এর খোঁজ পেয়েছে বলে আমাকে জানাল। আমি সবকিছু বিবেচনা করে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। আগেই বাইক ছিল, এখন তা ব্যবহারের পালা। দেশে, পরিবারের কাছে থেকেই আমার মন মতো কাজ করতে পারছি, এর চেয়ে বড় সুখ কিসে?
এমন একটি রাইডের কথা বলুন যা আপনি সবসময় স্মরণে রাখবেন-
একবার আমাকে এক ডাক্তার যাত্রী হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, ৬০ বছর বয়সে কিভাবে এতো ফিট হয়ে বাইক চালাচ্ছেন? উত্তরে বলেছিলাম, সবই খোদার কুদরত! তবুও ডাক্তার সাহেব আমার উত্তরে তেমন সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি আমার বৃত্তান্ত জানতে চাচ্ছিলেন। আমিও সুযোগ বুঝে তাকে আমার আমার জীবনকাহিনী বলতে লাগলাম। ডাক্তার সাহেব এরই মধ্যে মোবাইলে কাকে যেন ফোন করে বললেন বাসায় চলে যেতে। তিনি আরও বললেন, প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যায় বাসায় যেতে। আমরা দুজনে পাঠাও রাইড নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। কিভাবে দ্রুত একটি মাধ্যম সবার জীবনে চট করে পরিবর্তন নিয়ে এলো তা নিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলাম। সেদিন তার প্রথম রাইড ছিল। প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তাই কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন ডাক্তার হলেই কি সবকিছু জানতে হবে? অনেকেই অনেক কিছু জানে না। ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে আমরা সেদিনের যাত্রা ছিল অদ্ভুত সুন্দর।
আপনার কি বিশেষ কিছু বলার আছে?
নিজের জমির উপর নিজের বাড়ি আছে, তিন ছেলেকে পড়ানোর যথেষ্ট অর্থ আছে তবুও আমি কেন ৬০ বছর বয়সে বাইক চালাচ্ছি? কারণ যতই বয়স হোক না কেন আমি কাজপ্রেমী একজন মানুষ। বয়স কখনই কাজের জন্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমরা সবসময় বলে থাকি, বয়স হয়ে গেছে এখন ছেড়ে দেই। আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। বাইক চালিয়ে আয় করছি, তার সঙ্গে কাজও করে যাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের মানুষজন কর্মে বিশ্বাস, তারা সকল বাধাবিপত্তি কে উৎরিয়ে চলাফেরা করে।
যতদিন এই দেহে বল আছে, ততদিন আমি কাজ করে যাব।