পাঠাও কিভাবে মেহেদি আলমের জীবনে প্রভাব ফেলেছে?
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 12, 2018
পাঠাও কিভাবে মেহেদি আলমের জীবনে প্রভাব ফেলেছে?
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ মেহেদী আলম
মনে পড়লো আগের কথা, যখনই বাবা আমাকে কোনো কিছু কিনে দিতেন, রিসিটে আমার নাম লেখিয়ে নিজে দাম দিতেন। আজ গর্বের সাথে আমি বাবার নাম রিসিটে লেখিয়ে আমি দাম দিলাম।
*নাম:মেহেদি আলম
*বাড়ি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তেজখালীতে বড় হই আমি। ছোটবেলা থেকেই অনেক দুষ্টু ছিলাম, পড়াশোনায় মন ছিলোনা তেমন। মা বড় চিন্তায় থাকতো পাস করবো কিনা। এতো দৌড়ঝাঁপের মাঝে আমার রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে। সেই ২০০৬ সালের কথা, আমার বাবা তখন একলা এই বিশাল ঢাকা শহরে থাকতেন। শেষমেশ আমার মা আমাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করানোর জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। ঢাকায় খরচা গ্রাম থেকে অনেক বেশি, এজন্য প্রথমে বাবা চাননি যে আমরা আসি। অনেক চেষ্টার পর মা তার মন গলালেন এবং আমরা ঢাকায় এসে পড়লাম। মায়ের সার্বক্ষণিক ভাবনা ছিল আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি আমাকে পড়াশোনায় ভালো করানোর জন্য অতিমাত্রায় জোর দিতে লাগলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ত্যাগ কেউ গোনায় ধরে না। আমার বাবার সেই সামান্য উপার্জনে পাঁচজনের সংসার চালানো ছিল যেন একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তখনকার দিনগুলোতে তিন বেলা খাবার ছাড়া খুচরা খাবার যেমন বিস্কুটও ছিল একটি মহার্ঘ্য বস্তু। কিন্তু তখন ছোট ছিলাম অনেক সময়েই বুঝতে চাইতাম না যে বাবার হাতও বাঁধা, আমাদের সকল আবদার পূরণ করতে চাইলেই পারতেন না।
পাঠাও সম্পর্কে কিভাবে জানতে পারলেন?
ডিপ্লোমা শেষ করে গ্যাজেটস ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে একটা ছোট অনলাইন দোকান চালাতাম। সারা শহরে সাইকেলে চালিয়ে আমার কাস্টমারদের জন্য পণ্য কিনতাম ও ডেলিভারি দিতাম। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি খুব স্বাস্থ্যবান নই তাই সারাদিনের সাইকেল চালানো আমার শরীরের উপর ভয়ানক চাপ ফেলতে থাকে। একপর্যায়ে, যখন আমার বাবা আর্থিকভাবে একটু স্বাবলম্বী হলেন, আমি মনে সাহস জুগিয়ে গেলাম তার কাছে একটু কিছু টাকা ধার চাইতে, যাতে আমি বন্ধুর কাছ থেকে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনতে পারি। অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত ছিল এটা, বেশ অনেক ইনস্টলমেন্টের মাধ্যমে টাকাটা পরিশোধ করতে হতো আমাকে। বাবা যখন দেখলেন যে আমার অনলাইন ব্যবসাটি ভালোই চলছে, তিনি রাজি হলেন। ভাগ্যবশত আমার বন্ধু রাজি ছিল আমাকে সহজ শর্তে বিক্রি করতে, সেইসাথে আমাকে বাইক চালানো ও সে শেখাল। একটু অভ্যস্ত হতেই আমার লার্নার্স পারমিট পেলাম হাতে। সেইসময়ে পাঠাও এর “আসলেই ৫০০” নামের একটি ইভেন্ট চলছিল। সেখানে গিয়ে আমি রাইডার হিসেবে সাইন আপ করলাম এবং এরপর থেকেই আমি রাইড দিয়ে চলেছি। বর্তমানে আমি ফুল টাইম চাকরি পেয়েছি তাই শুধুমাত্র অবসর সময়ে রাইড দিতে পারি।
পাঠাও এর মাধ্যমে কিভাবে আপনার জীবন পরিবর্তিত হয়েছে?
আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমার পরিবার আমাকে সমর্থন করেছে। এতো কম থাকা সত্ত্বেও আমার কোনো ইচ্ছা পূরণ করতে আমার মা বাবা এতটুকুও দ্বিধা বোধ করেননি। হোক তা সাইকেল যেটা চালিয়ে আমি আমার ব্যবসা চালিয়েছি, হোক তা মোটরসাইকেলের জন্য ধার, যা কিনা আমার মা বাবার সাধ্যের বাইরে ছিল। তাই যখন থেকেই আমি একটু এক্সট্রা উপার্জন করতে পেরেছি আমি সামান্য চেষ্টা করেছি আমার মা বাবাকে কিছু দেয়ার। যদিও আমি কোনোভাবেই তাদের ঋণ শোধ করতে পারবোনা। আমার বাবা সবসময়ই স্মার্ট ফোনের ব্যাপারে কৌতূহলী ছিলেন। যেহেতু আমি এসব ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞ তাই আমরা সবসময়ই এসব নিয়ে আলাপ করতাম, নতুন সেট, দাম, ফিচার ইত্যাদি।
আমার বাবা তেমন কিছু জানেন না ফোন নিয়ে। তবুও তিনি বড় একটা স্ক্রিনওয়ালা স্মার্ট ফোন খুব পছন্দ করেন। উনি কখনও প্রকাশ্যে চাননি কিছু। এক সন্ধ্যায় কাজের পরে, বাসায় এসেই আমি বাবাকে বললাম আমার সঙ্গে বের হতে। মোটরবাইক চেপে চললাম সবচেয়ে কাছের ফোনের শোরুমে। বাবাকে বললাম “বাবা যেটা ভালো লাগে পছন্দ করেন”। তিনি সারা শোরুম ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন। বড় স্ক্রিন তার ভালো লাগে, তাই তিনি সিম্ফনি ট্যাবলেট পছন্দ করলেন। মনে পড়লো আগের কথা, যখনই বাবা আমাকে কোনো কিছু কিনে দিতেন, রিসিটে আমার নাম লেখিয়ে নিজে দাম দিতেন। আজ গর্বের সাথে আমি বাবার নাম রিসিটে লেখিয়ে আমি দাম দিলাম। আমার কাছে এই মুহূর্তটি ছিল একেবারেই অমূল্য।
পাঠাও আমাকে আমার ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করেছে। আমার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করেছে যেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি সম্ভব হবে। এখন আমি আমার হবু ভাগ্নের জন্য টাকা জমিয়ে চলেছি, মামা হিসেবে তাকে অনেক অনেক উপহার কিনে দেবার জন্য!