জাকির হোসেন খান এর জীবনের গল্প – সাথে আছে পাঠাও
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 8, 2018
জাকির হোসেন খান এর জীবনের গল্প – সাথে আছে পাঠাও
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ জাকির হোসেন খান
আজকে আমার কাউকে গাড়ি জমা দিতে হবে না, কাউকে টাকা জমা দিতে হবে না। আজকেই এই আয় একমাত্র আমার। পাঠাও আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার দিয়েছে।
• নাম: জাকির হোসেন খান
• বাড়ি: ফরিদপুর
• রাইড: ১৫৪৪
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুনঃ
আমি কৃষক পরিবারের এক ছেলে। পড়ালেখা করার সুযোগ তেমন পাইনি। সারাজীবন সংসার টানতে, পেটের দায় মিটাতে কাজ করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। বাড়ির বড় ছেলে হয়ে কৃষি কাজ করেছি, আবার রিকশা, ভ্যানও চালিয়েছি। এরপর অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হল সিএনজি চালিয়ে। কিন্তু তাতেও শান্তি পেলাম না। প্রতিদিন অসহায়ের মতো লাগতো।
পাঠাও-তে এলেন কি করে?
একদিন এক যাত্রীর মুখে ‘পাঠাও’ এর কথা শুনলাম। তিনি খুব সহজভাবে পাঠাও কি বুঝিয়ে দিলেন। তবে পড়াশোনা তেমন না জানার কারণে আমি ঠিকভাবে ধরতে পারিনি। যাত্রী নামিয়ে আমি পাড়ার এক বন্ধুর ছেলের কাছে যেয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলাম। সে আমাকে খুব যত্ন করে মোবাইলে কি করতে হবে, না হবে সব বুঝিয়ে দিল। তারপর আমাকে পাঠাও – এর অফিসে একবার ঘুরে আসতেও বলল। আমি সিএনজি মহাজনের কাছে দিয়ে আসলাম। চাবি দিয়ে বিদায় নিয়ে বললাম, কালকে থেকে আমি আর আসছি না। আমি চলে গেলাম পাঠাও এর অফিসে। কিভাবে কি করতে হবে, কি দরকার সব দেখে, বুঝেশুনে আসলাম। সবই তো হল কিন্তু বাইক? আমার কোমরে এক বড় অসুখ হয়েছিল, সেই চিকিৎসা করতে করতে জমানো টাকা সব শেষ। আর সিএনজি চালিয়ে কতইবা আয় করি? বিক্রয় ডট কমে আমার সেই বন্ধু ছেলের সহয়তা এক বাইক পেয়েও গেলাম। এক আর্মির লোক ব্রিক্রি করে দিবেন, খুব অল্প দামেই। যেদিন বাইক দেখতে গেলাম সেদিনই সব পাকাপাকি করে নিয়ে এলাম। কাগজপত্র তার পরের দিন হল। লোকটি খুব ভালো ছিল। আমাকে বিশ্বাস করে কাগজপত্র, টাকাপয়সা সব শোধবোধের আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন তার বাইক। অ্যাপ চালু করার পর রাইড পাচ্ছিলাম না। খুব ভয় পেয়ে গেলাম। যদি এই পদ্ধতি কাজে না লাগে তাহলে কোন মুখে ফিরে যাবো মহাজনের কাছে? তার কাছ মাথা নিচু করে চাবি নিয়ে সেই সিএনজি চালাতে হবে? কিন্তু কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করবার পর আমি আমার জীবনের প্রথম রাইড পেলাম। পৌঁছে দিলাম যাত্রীকে মাত্র ১০ মিনিট। এভাবে ১০টা রাইড একদিনেই শেষ করলাম।
পাঠাও আপনার জীবনে কোন পরিবর্তন এনেছে?
প্রত্যেক মানুষ উপরের উঠার স্বপ্ন দেখে, আমিও দেখতাম এককালে। কিন্তু রোজগার করতে গিয়ে স্বপ্ন ভেস্তে যায়। তখন আর উপরেও উঠা হয় না, আবার নিচের দিকে তাকাতে প্রচন্ড ভয় লাগে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আজীবনই সিএনজি চালাবো। রাইড শেষে পকেটে দেখলাম কষ্টের টাকা সহি সলমতে আছে। আজকে আমার কাউকে গাড়ি জমা দিতে হবে না, কাউকে টাকা জমা দিতে হবে না। আজকেই এই আয় একমাত্র আমার। পাঠাও আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার দিয়েছে।
আপনি কি অন্য রাইডারদের পাঠাও এ যোগদান করতে অনুপ্রাণিত করবেন?
আমার বাইক কেনার কথা, আমার এই উত্তরণের কথা একে একে করে সবার কানেই গেলো। সব পরিচিত মানুষের বিস্ময়ের সীমানা রইল না। এই আমি সাহস করে এতো বড় একটি পদক্ষেপ নিয়েছি। পাঠাও-তে জয়েন করার পর পরই আমি আমার অন্যান্য বন্ধুদেরকে উদ্বুদ্ধ করি যেন তারাও মহাজনী পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে রাইড শেয়ার করা শুরু করে। এবং তারা আমার উপদেশ নিয়েছে। আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি আমার এই কাহিনী হয়তো আরও অনেকেই উদ্বুদ্ধ করবে।