কিভাবে সাজ্জাদ হোসেন পাঠাওতে জয়েন করে জীবনে পরিবর্তন এনেছেন?
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 9, 2018

কিভাবে সাজ্জাদ হোসেন পাঠাওতে জয়েন করে জীবনে পরিবর্তন এনেছেন?
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ সাজ্জাদ হোসেন
সবসময় আমি বিশ্বাস করি, কারোর যদি কেউ উপকার করে থাকে তাহলে সে একদিন না একদিন অন্য কারোর কাছ থেকে উপকার পাবেই।
আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুনঃ
ছোটবেলায় মিচকে শয়তান বলে সবার কাছে পরিচিত ছিলাম। আমার মা বিশ্বাস করেনি যে এই ছোটখাটো মানুষ বাইক চালাবে। আমাকে সবাই সেলফিশ বলে। তাতে কি? আমি যা করার মনস্থির করে ফেলি সেটা করেই ছাড়ি। আমি কাউকে তোয়াক্কা করি না। বাবা-মা আমাকে অবশ্য খুব বকেন। কথাও শুনান। যত যাই হোক না কেন মানুষের উপকার করতে পিছপা হই না।
পাঠাও তে কিভাবে আপনার আসা হল?
জব লাইফে যখন ঢুকলাম তখন অফিসে আসতে যেতে প্রায়ই সারাদিন লেগে যেতো। সময়মত পৌঁছাতাম না। প্রতিদিন বকা খেতে হতো। আমি হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি বাইক কিনব। এর বিকল্প নেই। বাসায় বললে তারা গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। তারা অনেক চিন্তাভাবনা করার পর আমাকে বলে, ঠিক আছে কিনতে দিতে পারব কিন্তু তেলের খরচ তোমাকেই বহন করতে হবে। আমি বাসা থেকে টাকা নিলাম না। জব করলাম, টাকা জমালাম। একদিন কিস্তিতে বাইক কিনেই ফেললাম। ঢাকায় চলাফেরা করতে মানুষের কি পরিমাণ কষ্ট হয়ে সেটা আমি জানি। তাই অফিসে যাতায়াতের সময় চেষ্টা করলাম দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে সাহায্য করতে। কিন্তু মানুষ এমনভাবে তাকাতো যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো! কেউ কেউ তো এমন ব্যবহার করতো যে মন খারাপ করে বাসায় আসতাম। একদিন ফেসবুকের মাধ্যমে পাঠাও এর খোঁজ পেলাম। রেজিস্ট্রেশন শেষ করে পাঠাও – তে রাইড দিতে শুরু করলাম। তখন আর মানুষ কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি, এমনটা আর ভাবতে হলো না। মানুষকে সাহায্য করার একটি স্থায়ী মাধ্যম হয়ে উঠলো পাঠাও।
এমন একটি রাইডের কথা বলুন যা আপনি সবসময় স্মরণে রাখবেন-
সেদিন নিকেতন থেকে এক ইউজারকে নিলাম। তিনি উঠতেই হাঁসফাঁস করে আমাকে তাড়াতাড়ি চালাতে বললেন। দ্রুত চালাতে গেলে অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। তাই আমি সচরাচর বেশি স্পীডে বাইক টানি না। কি দরকার! কিন্তু তিনি যে করুণ কণ্ঠে আমাকে চালাতে বললেন তা শুনে মনে হচ্ছিল তিনি সত্যিই কোন বিপদে পড়েছেন। আমি দ্রুত চালাতে লাগলাম। লোকটি ১২ মিনিট বলেছিলেন,আর আমি ১১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছালাম। তিনি হন্তদন্ত করে নেমে দৌড়ে এক বাসায় ঢুকলেন। প্রায় ৫ মিনিট পর লোকটি দৌড়ে বের হলেন। তার হাতে ছোটখাটো একটা ব্যাগ। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, ভাইয়া আমাকে এক্ষুনি ধানমন্ডি ৩১ এ নিয়ে যেতে হবে। আমার হাতে সময় অনেক কম। জিজ্ঞেস করে জানলাম যদি সময়মত আমরা না পৌছাই তাহলে তার বাবার লাশ দেখা হবে না তার। আসলে মাঝেমধ্যে বাস্তবতা আমাদের অনেক অসহায় করে তুলে। আজ লোকটি তার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে হারিয়েছেন। তাঁকে শেষ এক ঝলক দেখার জন্য ছটফট করছে। বাবা-মা সম্পর্কিত সব ব্যাপার আমাকে অনেক টানে। কোন কষ্ট, ঝামেলা আমার সহ্য হয় না। আমি লোকটিকে ৮ মিনিটের মধ্যে ধানমন্ডি ৩১ এ নামালাম। লোকটি নেমইে দৌড় দিলেন। কিছু পথ যেতে না যেতেই আবার ফিরে এলেন, ধন্যবাদ জানাতে। অবশ্য তিনি ভাড়া দিতেও ভুলে গেছেন। আমিও তার কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করে তাকে সময় নষ্ট না করার উপদেশ দিলাম। ভাড়া এসেছিল ২২৫টাকা, তিনি ২৫০টাকা দিলেন। আমি এক পয়সা বেশি নেই না। কিছুতেই তিনি আমাকে কম দিতে চাচ্ছিলেন না। তবে আমি আমার নীতিতে সর্বদা সঠিক থাকি। অবশেষে যাই ভাড়া এসেছিল তাই দিলেন।
আপনার কি বিশেষ কিছু বলার আছে?
সবসময় আমি বিশ্বাস করি, কারোর যদি কেউ উপকার করে থাকে তাহলে সে একদিন না একদিন অন্য কারোর কাছ থেকে উপকার পাবেই। আমি আশা করে আছি সেদিনের জন্য যেদিন আমি বিপদে পড়লে এই সৎ কাজের প্রতিদান পাবো।