পাঠাও কিভাবে ওয়াসির রাইয়ানের জীবনে পরিবর্তন এনেছে?
- পাঠাও অগ্রযাত্রার অগ্রদূত
- আগস্ট 8, 2018
অগ্রযাত্রার অগ্রদূতঃ ওয়াসির রাইয়ান
জীবন কখন কোন দিকে টেনে নিয়ে যায় তা আন্দাজ করা ভার। পড়ুন পাঠাও রাইডার ‘ওয়াসির’ ভাইয়ের ব্যতিক্রমী বাস্তব ঘটনা, কিভাবে তিনি জ্যাম পেরিয়ে এক ডাক্তারকে সময়মত পৌঁছে দিয়ে এক ছেলের জীবন বাঁচলেন।
- নাম: ওয়াসির রাইয়ান জীবন
- বাড়ি: ঢাকা
- রাইড: ১২৩৬
আপনার সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন
বেড়ে উঠা ঢাকাতেই। ছোটবেলা থেকে অনেক চুপচাপ স্বভাবের ছিলাম তো তাই সবাইকে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতো। বলতো, আমি সারাজীবন মায়ের আঁচলের নিচেই থাকবো। অনেক সহজ-সরল ছিলাম এমনকি কারোর সঙ্গে উচ্চস্বরে কথাও বলতে পারতাম না। সেই ছেলেই সবাইকে তাক লাগিয়ে ২৩ বছর বয়সেই বিয়ে করে বসলো। তাও নিজের পছন্দের বান্ধবীকে। সবাই আমার সাহস দেখে ভিরমি খাওয়ার উপক্রম হল! আমার জীবনে সবকিছুই দ্রুত হয়েছে। বিয়ে, সন্তান এবং সাফল্য।
পাঠাও কিভাবে আপনার জীবনে পরিবর্তন এনেছে?
আমি করতাম গার্মেন্টস এক্সসেসরিজ ব্যবসা। ভালোই চলছিল। তবে বেশিদিন কপালে ‘ভালো’ ছিল না। হঠাৎ করেই বাধা, তারপর টাকা শেষ হয়ে যাওয়া সব যেন আমার জীবনের ‘দ্রুত’ ধারার মতো ঘটে গেলো। কথায় আছে না ‘সকাল বেলার ধনীরে তুই, ফকির সন্ধ্যা বেলা’, ঠিক এমনি অবস্থা হয়েছিল। ২০১৪ সালে হঠাৎ করেই সব শেষ! সংসারে এমন বেহাল দশা দেখে আমার স্ত্রী একটি চাকরী নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কোন না কোনভাবে সংসারের চাকা তো সচল রাখতেই হবে। ওদিকে আমি আমার বন্ধুদের কাছে, নাহলে আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার করে তাল মিলানোর চেষ্টা করলাম। আমার স্ত্রী পেল একটি কিন্ডারগার্ডেনে জব। খুব অল্প বেতন। তাও সংসারের খাতিরে শুরু করে দিল। আমার লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেল। সংসার চালাতে পারছি না। বারবার মনে হচ্ছিল, আমি কেমন স্বামী? আমি কেমন বাবা? আমি হন্য হয়ে চাকরি খুঁজতে লাগলাম। যাও পেলাম সেগুলোর বেতন খুব অল্প। সারা ২০১৫ গেল অর্থাভাবে। ২০১৬ এর শুরুতে এক চাকরি পেলাম, নিয়েও নিলাম। বেতন অল্প তাতে কি? চোখ বুজে করে গেলাম। তবে তাও বেশিদিন টিকল না। ২০১৭ সালের মে মাসে একদিন জানতে পেলাম ‘পাঠাও’ – এর কথা। আমি এদিক, ওদিক না তাকিয়ে শুরু করলাম ফুল টাইম রাইড! একমাসে চেষ্টা করলাম যেন ভালোভাবে চালিয়ে যেতে। জুনে পেলাম নতুন চাকরি, তাই ফুল টাইম দিতে পারলাম না পাঠাও’তে। তারপরও অফিস শেষে রাইড শেয়ার করতে লাগলাম। আমার আয় বাড়তে লাগল। বুকের ভিতর জমে থাকা পাথরগুলো একে একে ভাঙতে লাগল। লোন শোধ করছি, স্ত্রী-বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটাতে পাচ্ছি, এর চেয়ে বড় সুখ কি আছে? হঠাৎ করেই অবস্থার পরিবর্তন আবার! ‘পাঠাও’ না থাকলে বোধহয় আর উঠেই দাঁড়াতে পারতাম না।
এমন একটি রাইডের কথা বলুন যা আপনি সবসময় স্মরণে রাখবেন-
একদিন আমার কাছে এক রিকোয়েস্ট এলো। সঙ্গে সঙ্গে একসেপ্ট করে কল করলাম। ওপাশ থেকে করুণ গলায় এক ভদ্রলোক বললেন, আপনি কোথায়? আমি আমার লোকেশন বললাম। লোকটি একটু ভয়ার্ত কণ্ঠে আমাকে কালশী মোড়ে থাকা এক সাদা গাড়ির সামনে যেতে বললেন। আমি তাকে বললাম তিনি যেন বিচলিত না হয়। গাড়ির সামনে যেতেই এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমায় দেখা দিল। গুরুগম্ভীর হওয়াতে আমি কথা বলতে একটু ভয় পাচ্ছিলাম। তাও কথা বলার চেষ্টা করলাম। অল্প কিছু কথা চালাচালি করে জানতে পারলাম তিনি সার্জিক্যাল ডাক্তার। আমাকে ফোন করছিলেন তার পেশেন্টের বাবা। আজকে ছেলেটার একটি অপারেশন হওয়ার কথা এবং তিনি হসপিটালেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকা শহরের জ্যাম তো আর কাউকে মানে না। সে তো যমদূতের মতো। তার কোন নেই দয়ামায়া, সময়ের বালাই। আমার বুক ধক করে উঠলো। আহারে! তারা কি চিন্তায় না আছে! আমি নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করলাম দ্রুত চালিয়ে ডাক্তারকে পৌঁছে দেবার জন্য। দেখুন! ‘দ্রুত’ আমার পিছন ছাড়ছেই না। পুরোটা রাইড আমি ছিলাম ঘোরের মধ্যে। সারাক্ষণ চিন্তায় আছি কি করছে ছেলেটা এখন? কি করছে তার বাবা, মা? তারা নিশ্চয় দোয়া করছে ডাক্তার যেন তাড়াতাড়ি আসেন। এবং অবশেষে তাদের দোয়া কাজেও লাগল। পাঠাও-এর উসিলায় আমি ডাক্তারকে সহি সালামতে পৌঁছে দিলাম গন্তব্যে। তিনি দৌড়ে হসপিটালে ঢুকলেন। আমি বড় করে নিঃশ্বাস নিলাম। পরিবারটি এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়বে। আমার বুকটাও হালকা হল। মুখ টিপে হেসে রাইড খোঁজায় মনযোগী হলাম।
অন্যদের উদ্দেশ্যে কোন পরামর্শ-
জীবনে চরাই উতরাই আসবেই।এটাই স্বাভাবিক। আমি যেমন বলি সবকিছু আমার জীবনে দ্রুত ঘটে আর ঘটছে। আর ধৈর্য ধরা অনেক বড় ব্যাপার। ‘পাঠাও’ আমার জীবনে এক সময় এসেছিল যখন আমি চারদিকে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখছিলাম না। এক আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আপনারা যারা এখনও সন্দিহানে আছেন পাঠাও নিয়ে তাদের বলবো, একবার ট্রাই করেই দেখুন। আমার যেমন জীবন বদলেছে তেমনি আপনার জীবনও দ্রুত বদলে দিতে পারে ‘পাঠাও’।